বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০০৯

কিছু রচনা ২

আজকের রচনাঃ-
কেন এমন?

দিল্লীর, তিলক নগর মার্কেটে শপিং করতে গিয়ে দেখি, খুব ফর্সা, সুন্দরী একটি মেয়ে, বার-বার আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। কিছুতেই মনে করতে পারলাম না যে মেয়েটি কে? সে এগিয়ে এসে আমায় ‘নমস্তে’ করল। আমি না চিনলেও ও আমাকে চিনেছে। নাম বলল নেহা। মেয়েটিকে দেখে পাঞ্জাবী মনে হলেও কথাবার্তা হিন্দীতেই হচ্ছিল। কোনো একসময় সে নাকি আমার ছাত্রী ছিল। বছর দুই হল বিয়ে হয়েছে। শ্বশুরবাড়ী বম্বেতে। ইদানীং স্বামীর দিল্লীতে বদলী হওয়ায় বিকাশপুরীতে বাড়ী ভাড়া করে রয়েছে। আমিও বিকাশপুরীতেই থাকি তাই কৌতুহলবশতঃ বাড়ীর নম্বরটা জিগেস করতে জানতে পারলাম যে আমার বাড়ীর কয়েকটা বাড়ী ছেড়েই ওর বাড়ী। তারপর মাঝে-মধ্যে ওর সাথে পাড়াতেই দেখা হয়ে যেত। এক-আধবার ও স্বামী মহেশ কে নিয়ে আমাদের বাড়ীও এসেছে। মেয়েটি খুব হাসিখুশী। গল্পচ্ছলে প্রায়ই একমাত্র ভাইয়ের কথা তোলে। ইজ্ঞিনিয়ারিং পাশ করে সে আমেরিকায় মস্ত বড় চাকরী করছে।

হঠাৎ একদিন ফোন বাজতে দেখি- সেই পাঞ্জাবী মেয়েটির ফোন। বিশেষ ভাবে আমাকে অনুরোধ করছে রাত্রীবেলায় ওর বাড়ী ডিনার করতে। ওর ভাই এই প্রথম আমেরিকা থেকে আসছে। দিদির বাড়ী রাত নটা নাগাদ পৌঁছবে। আমি গেলে ওর ভাইও খুব খুশী হবে। কারণ ওর ভাইও নাকি আমার ছাত্র ছিল। কি আর করি! রাত আটটা নাগাদ ওর বাড়ী গেলাম। খুবই সুন্দর ভাবে সাজানো ছিমছাম বাড়ী। ওরা স্বামী-স্ত্রী আমাকে আপ্যায়ন করে বসাল। এটা-সেটা গল্প হতে লাগল। মেয়েটির নজর অবশ্য বারে-বারেই ঘড়ির দিকে যাচ্ছিল। দেখতে-দেখতে নটা বেজে গেল। সাড়ে নটা বাজল। মেয়েটি অধীর ভাবে অপেক্ষা করছিল ভাইয়ের আসার। আমরা ওকে বোঝাচ্ছিলাম যে অনেক সময়ই ফ্লাইট লেট হয় বা রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম থাকে। মেয়েটির মন হাল্কা করতে আমি ওর সাথে রান্নাঘরে গেলাম খাবার আয়োজন দেখতে। ভাইয়ের জন্য মেয়েটি নানাবিধ রান্না করেছিল। নতুন ক্রকারি সেটে সব সাজানো রাখাছিল। হঠাৎ ফোনটা বাজতে মেয়েটি ছুটে গিয়ে ফোন ধরল। খানিকক্ষণ ফোনে কথা বলে ধীর পদক্ষেপে, কাছে এসে, কান্নাবোজা গলায় বলল যে ওর ভাই এক বন্ধুর বাড়ী উঠেছে। পরে কোনোদিন বোনের সাথে দেখা করতে আসবে। মেয়েটির দুই চোখ জলে ভরে গিয়েছিল।

ওর বেদনাময় সুন্দর মুখের দিকে তাকাতেই হঠাৎ বিদ্যুতের মতই স্মৃতিপটে নামটি ভেসে উঠল----নেহা! বহু বছর আগে, ক্লাস থার্ডে আমি অঙ্কের ক্লাস নিচ্ছি। ক্লাস টু-এর দুটো বাচ্চা ক্রন্দনরত তাদের সাথীকে আমার কাছে নিয়ে এল। তার ঠোঁটের কাছে একটু রক্ত লেগেছিল। সে নাকি নেহার ভাই। এই বয়সের বাচ্চাদের প্রায়ই দুধের দাঁত পড়ে। তাই আমি ওদের বললাম- ‘যাও, এর মুখ ধুইয়ে দিয়ে ওকে নিজেদের ক্লাসে নিয়ে যাও।‘ বাচ্চাদুটি নেহার ভাইকে নিয়ে চলে গেল। আবার ব্ল্যাক বোর্ডের দিকে যেই মুখ ঘুরিয়েছি, কানে এল ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ। দেখি- নেহা কাঁদছে ও তার ফর্সা সুন্দর মুখটা লাল হয়ে গেছে। ‘যাও, ভাইকে দেখে এস।' বলতেই এক ছুটে সে চলে গেল এবং কিছুক্ষণ পরেই হাসিমুখে ক্লাসে ফিরে এল। আজ কে ফিরিয়ে দেবে তার মুখে হাসি!

২টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

বেশ লিখেছেন ।
ধন্যবাদ আপনাকে

coffeehouseraddablog বলেছেন...

আপনি তো সুন্দর লেখেন। আপনি কফি হাউসের আড্ডা ব্লগে লিখতে পারেন ... coffeehouseradda.com