বৃহস্পতিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১০

শেষ থেকে শুরু

ছেলেটির নাম বিক্রম। বয়স সাত। তিন দিদির আদরের ছোট ভাই। ওরা যে স্কুলে পড়ে, আমি সেই স্কুলেরই শিক্ষিকা। দিদিরা প্রতিদিন নিয়ম করে টিফিনে ভাইয়ের কাছে এসে তার খাওয়ার দেখাশোনা করে তারপর যেত। আমি অনেকবার বুঝিয়েছি যে বিক্রমকে নিজেই খাবার খেতে দাও। ওকে একা ছেড়ে দিলে ও বেশি সাব্যস্ত হবে, কিন্তু প্রাণপ্রিয় ভাইকে বেশীক্ষণ একা ছেড়ে তারা থাকতেই পারত না।

ওদের বাবা হাবিলদার। আর্থিক অবস্থা খুব সুবিধের নয়। কিন্তু ওরই মধ্যে চারজনাই বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে স্কুলে আসত। বিক্রমের তিন দিদিই একসময় আমার ছাত্রী ছিল। তিনজনাই বেশ মেধাবী, কিন্তু ছোট ভাইটা বেশী আদরের জন্যই হউক বা যে কোন কারণেই হউক, পড়াশুনোয় বেশ একটু কাঁচা ছিল। মনে হত পড়াশুনো যেন ওর মাথাতে ঢুকছেই না। পড়াশুনোয় ভাল না হলেও, এত শান্ত-শিষ্ট নিরীহ গোছের ছিল যে কি বলব! চেহারাটা ছিল একেবারে মায়া মাখানো, মন কাড়ানো। ক্লাসে অন্যান্য বাচ্চারা চেঁচামেচি, ঝগড়া-ঝাঁটি করত কিন্তু বিক্রম সব সময়ই চুপ করে বসে থাকত। মাঝে-মাঝে ভাবতাম ওর নামটা ওর আচার-আচরণের সাথে একেবারেই খাপ খায় না।

প্রতি তিন মাস অন্তর যখন পেরেন্ট টীচার মীটিং হত, বিক্রমের বাবা কখনই আসতে পারত না – কেননা বেশিরভাগ সময়ই বাইরে-বাইরে নন-ফ্যামিলি স্টেশনে পোস্টিং এ থাকতে হত। বিক্রমের মা অবশ্য আসত। নিরীহ গোবেচারা চেহারার মানুষ। তিন-চার ক্লাস অবধি পড়েছে। পড়াশুনার ব্যাপারে কথা বললে কিছুই বুঝতে পারেনা। অগত্যা দিদিদেরই বুঝিয়ে বলতাম, বিক্রমের পড়াশুনোর দিকে একটু খেয়াল রাখতে।

বিক্রম যে কেবল পড়াশোনাতেই পিছিয়ে থাকত তা নয়। খেলাধুলোতেও তার কোনো আগ্রহ ছিল না। গেম্‌সের পিরিয়ডে অন্য বাচ্চারা খেলাধুলো করত, ও কিরকম ছল-ছল চোখে চুপ করে বসে থাকত। এক-আধবার আমি ওর মাকে বলেছি যে বিক্রমকে একজন ভাল ডাক্তারকে দেখাও কারণ ওর কাশি ও গলা ব্যথা লেগেই থাকত। ওর মা একা হাতে চারটে বাচ্চা নিয়ে, সংসার করে আর পেরে উঠত না। অভাবের সংসারে মার চেহারাও সেরকম। সব সময়ই যেন ধুঁকছে। আমাদের স্কুলে বেশীরভাগ বাচ্চারা এইসব পরিবার থেকেই আসে, তাই আমরা খানিকটা অভ্যস্ত হয়ে গেছি। তারই মাঝে যতটা সম্ভব ওদের সুস্বাস্থের মর্ম বোঝাই।
বাচ্চাদের পড়ানো ছাড়াও আমাদের নানারকম অন্য কাজও করতে হয়। তার মধ্যে একটা হল রিলিফ ফান্ড জোগাড় করা। কখনও বণ্যাত্রাণ, কখনও ওল্ড-এজ রিলিফ, আবার কখনও ক্যান্সার সাহায্য। সব বাচ্চাদের ফর্ম দিয়ে দেওয়া হয়। বাচ্চারা বাড়ী-বাড়ী গিয়ে নিজের প্রতিবেশীদের থেকে বা নিজের আত্মীয়-স্বজনদের থেকে দশ টাকা, বিশ টাকা, যে যেমন দেয় – জোগাড় করে। যে যত টাকা জোগাড় করে, সে হিসেবে তাদের সার্টিফিকেট, ব্যাজ, রিলিফ ফান্ড নামের টি-সার্ট এসব দেওয়া হয়। পুরো স্কুলের যে ছাত্র সব থেকে বেশী টাকা জোগাড় করে, তাকে একটা স্পেশাল শীল্ড দেওয়া হয়।

সেবার ফর্ম এল ক্যান্সার রিলিফের। আমি সব বাচ্চাদেরই ফর্ম দিয়ে দিলাম। বলতে ভুলে গেছি, আমি বিক্রমের ক্লাস টীচার ছিলাম। বাচ্চাদের মোটিভেট করতাম যাতে তারা বেশী-বেশী টাকা জোগাড় করতে পারে কারণ টাকাটা একটা ভাল সংস্থানে যাবে আর পুরস্কার স্বরূপ ওরাও অনেক জিনিষ পাবে যেমন টি-সার্ট, ব্যাজ, সার্টিফিকেট, শীল্ড এসব। আমার মোটিভেশানের জন্যই হউক বা যে কারণেই হউক বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমার ক্লাসের বাচ্চাদের কালেকশন সবথেকে বেশী হত। কএকবার ত শীল্ডটাও আমারই ক্লাসের বাচ্চা পেত। এইবার ক্লাস কালেকশনটা বেশী হয়নি। হয়ত বাচ্চারা খুব ছোট বলে। কিন্তু আশ্চর্য্যভাবে বিক্রম একাই পনেরোশো টাকা জোগাড় করে আনল। বিক্রমকে জিগেস করায় ও কিছুই বুঝিয়ে বলতে পারল না। বুঝলাম তিন দিদি মিলে ভাইকে খুশী করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। আমাদের স্কুল টা সরকারি স্কুল। একটা বাচ্চার পনেরোশো টাকার জোগাড় করা মানে অনেক বড় ব্যাপার। স্কুলের রেকর্ডে খোঁজ নিয়ে দেখলাম ক্লাস ‘টু’ – সেক্শান ‘এ’, বিক্রমের কালেকশানই সবথেকে বেশী – অর্থাৎ শীল্ডটা ওই পাবে। অর্গানাইজেশন টীমের সমক্ষে, প্রিন্সিপালের হাত থেকে, সব বাচ্চাদের সামনে, স্টেজে উঠে, শীল্ডটা নেওয়া অনেক সম্মানের ব্যাপার। এই ভেবে ভাল লাগল যে, যাক্‌ কোনো বিষয়ে ত ও এগিয়ে আছে! বাচ্চাটা যেন হাসতেও ভুলে গেছিল।

এরপর দুমাসের জন্য গরমের ছুটি পড়ে গেল। পয়লা জুলাই স্কুল খুলতেই আমাদের প্রথম কাজ হয় বাচ্চাদের ফীস নেওয়া। দশ জুলাই ফীস দেওয়ার অন্তিম দিন। ক্লাসের সব বাচ্চার ফীস এসে গেল অথচ বিক্রমের ফীস এখনও এলনা। স্কুল খোলার পর থেকে বিক্রম একদিন ও আসে নি। দশ তারিখের পর ফীস দিলে প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে ফাইন দিতে হয়। ফীসের ব্যাপারে পেরেন্টসদের রিমাইন্ডার দেওয়া যদিও টীচারের ডিউটির মধ্যে পড়ে না তবুও আমি প্রিন্সিপালের রুমে গেলাম ফোন করার জন্য। ফোন করতেই ওপার থেকে পুরুষের কণ্ঠস্বর ভেসে এল। মনে হয় বিক্রমের বাবা। ফীস না দেওয়ার কারণ জিগেস করায় বলল – কিসের ফীস? আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম কেননা ওর বাবার সাথে কোনোদিন কথা বলার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। আমি একটু রাগত ভাবে যখন বুঝিয়ে বললাম যে আজ ফীস জমা দেওয়ার অন্তিম দিন আর বিক্রমের ফীস এখনও জমা পড়ে নি তখন ভদ্রলোক খানিকক্ষণের জন্য চুপ করে গেলেন তারপর অতি শান্ত ভাবে বললেন – “ম্যাডাম, বিক্রম গত সপ্তাহে গলার ক্যান্সারে মারা গেছে।” শুনেই আমার মাথাটা কিরকম ঘুরে গেল। আমার ছল-ছল চোখ দেখে প্রিন্সিপাল ঘাবড়ে গিয়ে জিগেস করলেন – “ম্যাডাম, কি হয়েছে?” আমি রিসিভারটা প্রিন্সিপালের হাতে দিয়ে চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়লাম।

তারপর ‘সেইদিন’ এল। ক্যান্সার রিলিফ অরগানাইজেশানের টীম প্রিন্সিপালের সাথে স্টেজে উঠল। সামান্য বক্তৃতার পর ঘোষণা করা হল – যে ক্লাস সবথেকে বেশী ফান্ড কালেক্ট করেছে এবং সেই টীচারকে শীল্ড দেওয়া হল। যেটা আমি পূর্বে বেশ কয়েকবার পেয়েছি। এইবার নাম ঘোষণা হবে যে ছাত্র সবথেকে বেশী ফান্ড জোগাড় করেছে। আমি ভীষণ নার্ভাস ফীল করছিলাম। শ্রীমান বিক্রমের নাম ঘোষণা হতেই আমার দম যেন বন্ধ হয়ে এল। নিমেষের জন্য চোখও বন্ধ হয়ে গেল। চোখ খুলতেই দেখি বিক্রমের তিন দিদি স্টেজের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমি ত ভাবছিলাম ওরা কান্নায় ভাসিয়ে দেবে, কিন্তু দেখলাম ওরা তিনজনেই হাসিমুখে স্টেজে চড়ছে। ছল-ছল চোখ ছাড়া আর কোনো ভাবেই ওদের দুঃখ কষ্ট প্রকাশ পাচ্ছিলনা। ওদের বুকভরা কান্না শুধু আমিই বুঝতে পারছিলাম। প্রিন্সিপাল বিক্রমের বিষয়ে দুকথা বলে শীল্ডটা ওদের হাতে ধরিয়ে দিল। হাততালির যেন বন্যা বয়ে গেল। বিক্রম প্রাণ দিয়ে বীর-বিক্রমে দেখিয়ে দিল ওর দিদিরা (মেয়েরা) নতুন যুগের।

রবিবার, ৬ জুন, ২০১০

সমাধান

কি বলব মশাই! আরশোলার উপদ্রবে পাগল হতে বসেছিলাম। বাড়ীটা চারতলায় তাই কুকুর বেড়ালের ত প্রশ্নই ওঠেনা, এমনকি একটা ইঁদুর, ছুঁচো, টিকটিকি কিছুই দেখতে পাইনা। কেবল মাঝে-মাঝে, খুদে-খুদে পিঁপড়ে আর রাশি রাশি শুধু আরশোলা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নর দিকে যে নজর নাই তা নয়। বাড়ির ঝি টা ত ঝাড়া-পোঁছা করেই, আমিও রীতিমত লেগে থাকি। শহরের বেশির ভাগ সব বাড়ীই খুব পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, তায় আবার আমার কর্ত্তা এসব ব্যাপারে একটু বেশি মাত্রায় সজাগ।

এবার একটু বিস্তারে বলি। মাইক্রোওয়েভের দরজা খুললাম – এপাশ ওপাশ দিয়ে দুচারটে আরশোলা ঝটিতি দেখা দিয়ে কোথায় যে অদৃশ্য হয়ে গেল, কিছুতেই হদিশ পেলাম না। খাবার গরম করা তখন মাথায় উঠল। সঙ্গে-সঙ্গে ভিনিগারে কাপড় ডুবিয়ে আপাদমস্তক (মাইক্রোওয়েভের)পোঁছা হয়ে গেল। মন খারাপ করে খেতে বসা হল। মন খারাপ এইজন্য কেননা মাঝে একবার মাইক্রোওয়েভটা বিগড়ে গেছিল। মেকানিক ডাকায় বোঝা গেল যে ওটার সার্কিটে নাকি আরশোলার একটা ছোট্ট বাচ্চা কোনোরকমে ঢুকে গেছে। নতুন সার্কিট লাগাতে বেশ কিছু টাকা আক্কেলসেলামি দিতে হল। আর এ ত হল একটা সামান্য ঘটনা। প্রতি পদক্ষেপেই আরশোলাদের সাথে দিনের পর দিন যুঝতে হচ্ছিল। জীবন যেন বিভীষিকাময় হয়ে উঠেছিল। যদিও পুরো বাড়ির আনাচে-কানাচে ওদের একছত্র আধিপত্য গড়ে উঠেছিল, কিন্তু রান্নাঘরটাই ছিল ওদের আসল ঘাঁটি। তাকের পাল্লাগুলো খুললেই ষড়যন্ত্রকারী আরশোলা সমষ্টিকে দেখা যেত আলচনামগ্ন – কি ভাবে বাড়ীর সদস্যগণকে আর ও জব্দ করা যায়।

আরশোলাদের দৌরাত্ম্য কম হচ্ছে না দেখে বেশ কয়েকবার বেগন স্প্রে আনা হল। নিয়ম করে, রাতে শুতে যাবার আগে নালীর জালিগুলোয় ভাল করে স্প্রে করা হল। ও হরি! একদিন-দুদিন যদি বা একটু কমল, আবার যে কে সেই। বান্ধবীদের সঙ্গে এই নিয়ে কথা বলায় একজন বলল – ময়দা আর বরিক পাউডার সমান-সমান মিলিয়ে চিনি ও দুধ দিয়ে ছোট-ছোট গুলি পাকিয়ে রাত্রিবেলায় রান্নাঘরের আনাচে-কানাচে দিয়ে রাখতে। কিন্তু কোথায় আরশোলা! গুলিগুলো সারাদিন পা লেগে-লেগে এদিক-ওদিক গড়াগড়ি খেতে লাগল। তারপর একদিন একটা নামকরা ম্যাগাজিনে পড়লাম – দুধের সঙ্গে চিনি আর বরিক পাউডার গুলে রাত্রি বেলায় প্লেটে রেখে দিতে – ঠিক যেন বেড়াল কে দুধ খেতে দেওয়া। ম্যাগাজিনটার প্রতি যথেষ্ট আস্থা ছিল, সেইজন্য খুব ভরসা নিয়ে, নিশ্চিন্ত মনে সেদিন ঘুমতে গেলাম এই ভেবে যে সকাল হলেই বাজিমাত। রাত্রে ঘুম ত হল, কিন্তু স্বপ্নে শুধু পেল্লাই সাইজ়ের এলিয়ন আরশোলাদের ই দেখলাম – পুরো পৃথিবী কোনো এক অদ্ভুত উপায় দখল করে নিয়েছে। সকাল হলে, রান্নাঘরে গিয়ে দেখি – কোথায় আরশোলা! সমস্ত দুধটা, সারারাত জমে দই হয়ে গেছে আর খুদে-খুদে পিঁপড়েরা চারিদিক ছেঁকে ধরেছে। খুবই মনমরা হয়ে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিলাম – একমাত্র ঝাঁটার বাড়ি মেরেই ওদের গুষ্টিকে শেষ করতে হবে। দিনের বেলায় ওরা বেশি বের হয় না। তাই মাঝরাতে চুপি-চুপি ঝাঁটা নিয়ে রান্নাঘরে গেলাম। এক হাতে ঝাঁটা, অন্য হাতে টর্চ। আলো জালালাম না পাছে পালিয়ে যায়। চারিদিকে নানান সাইজ়ের আরশোলার আনাগোনা দেখতে পেলাম। এলোপাথাড়ি ঝাঁটার বারি মারতে শুরু করলাম। বেশ কিছু খুদে আরশোলা মারাও পড়ল, কিন্তু ওদের দিদু-দাদুরা দেখলাম আমাকে দিব্যি কলা দেখিয়ে ফড়ফড়িয়ে উড়তে লাগল। আরশোলাদের সচরাচর এভাবে উড়তে দেখা যায় না। বড়-বড় আরশোলাগুলো কে ওভাবে উড়তে দেখে সত্যজিৎ রায়ের ‘ইয়ে’ গল্পটা মনে পড়ে গেল যাতে কুকুরছানাটা আত্মরক্ষার্থে পাখি হয়ে উড়ে চলে গেছিল।

এইভাবে মাঝরাতে উঠে-উঠে আরশোলা মারার উৎসাহ টা কিছু দিনেই দমে গেল, যার ফলে ওরাও মহা আনন্দে বংশ বৃদ্ধি করতে লাগল। এরপরের কথায় আসি। কিছুদিন থেকেই আমার মনে হচ্ছিল, আরশোলাদের সংখায় একটু ঘাটতি হয়েছে। পর-পর কয়দিন খেয়াল করতেই দেখলাম – সত্যিই ত! বড় আরশোলা বলতে গেলে আর দেখাই যাচ্ছে না। কেবল মাত্র ছোট-ছোট আরশোলাগুলোই নজরে পড়ছে। কিছুগুলো সবেমাত্র ডিম ফুটে বেরিয়েছে বা তার চেয়ে আরেকটু বড়। আমার মাথাটা কি ভাবে গুলিয়ে গেল। অনেক মাথা ঘামিয়েও কিছুতেই এই রহস্যের কুল-কিনারা করতে পারছিলাম না। রান্নাঘরের পাল্লাগুলো খুলে সব কোনায় খুঁজে-খুঁজে দেখলাম। না! বড় আরশোলার কোথাও নামগন্ধ ও নেই। এ ত বড় আশ্চর্য্যের ব্যাপার। কারো সাথে এই নিয়ে কথা বলতেও সাহস হচ্ছিল না কারণ এমনিতেই আমার আরশোলা ফোবিয়া নিয়ে সবাই ঠাট্টা করতে শুরু করেছিল। এর পরে ত আমায় কেবল পাগল ঠাওরাবে। আরশোলা সমস্যাটা ধীরে-ধীরে সমাধান হয়ে যাচ্ছে ভেবে কোথায় আনন্দ করব তা না আমার মাথায় রহস্যের চিন্তা টা পোকার মত কুরে-কুরে খেতে লাগল। রাতে ভাল ঘুম হত না। খাওয়ায় রুচি নাই। নিজে কে নিয়ে কি করব নিজেই বুঝতে পারছিলাম না।

হঠাৎ একদিন রাত্রিবেলায় জল খেতে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি – কি একটা ধীরে-ধীরে, ছায়ার মত মিলিয়ে গেল। ঘুম চোখে কিছুই বুঝতে পারলাম না। এসে শুয়ে পড়লাম। এরকমই আবার কিছুদিন পর মধ্য রাতে, রান্নাঘরে গিয়ে দেখলাম, কি একটা যেন চোরের মত, চুপিসাড়ে, অন্ধকারে মিলিয়ে গেল। সেদিন বলতে গেলে একটু ঘাবড়েই গেছিলাম। আগেই বলেছি, আমাদের বাড়ি কুকুর, বেড়াল, ইঁদুর কিছুই নাই। তাহলে কে এ’রম মধ্যরাতে আসে আর আমাকে দেখেই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। এর সাথে কি সেই আরশোলা রহস্যের কোনো যোগাযোগ আছে? এর একটা কিনারা করতেই হবে। পরদিন রাতে আর না ঘুমিয়ে, আমি ঠিক মধ্যরাতে উঠলাম এবং রান্নাঘরে গিয়ে ছোট, আবছা আলোটা না জ্বালিয়ে জোরালো আলোটা জ্বালিয়ে দিলাম। আর জ্বালাবার সঙ্গে-সঙ্গে দেখলাম কুড়াদানের নিচে থেকে বেশ বড়-সড় একটা টিকটিকি ছুটে পালিয়ে পাল্লার নিচে ঢুকে গেল। তখন সবকিছুই জলের মত পরিষ্কার হয়ে গেল। প্রকৃতিই সব কিছু ব্যালেন্স করে রেখেছে। আমাদের বেশি মাথা না ঘামালেও চলবে।

রবিবার, ২৪ মে, ২০০৯

কিছু রচনা (কবিতা)

ছোট্ট নাতী ঠাকুমা বলতে পারে না- বলে আম্মা। এখন সে দশ বছরের হয়েছে। ঠিক পূজোর আগেই আম্মা আকাশের তারা হয়ে গেল। নাতীর আকুল আবেদন ভরা এই রচনা (কবিতা)

আম্মা আমার আসবে আমার

আম্মা তুমি কোথায় গেলে?
আমায় এর’ম একলা ফেলে!
তুমি কি ঠাকুর আনতে গেলে?

দুর্গাপুজো তোমায় ছাড়া
হচ্ছি কেমন দিশেহারা,
নতুন-নতুন জামা-জুতো
সবই কেমন খাপছাড়া।

এখন তুমি রাতের তারা
ভেবে প্রাণে জাগায় সাড়া,
গতিশীল এই জগতে
কেউ বলে না একটু দাঁড়া।

আমি যখন বড় হব
দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়াবো,
তোমার স্বপ্ন সফল করে
যোগ্য নাতির খেতাব লব।

স্বপ্ন দেখি তোমায় ঘিরে
ঢেউ খেলা এক সাগর তীরে,
কখন তুমি মোর জীবনে
খুকী হয়ে আসবে ফিরে।

কান্না হাসির ক্ষণে-ক্ষণে
আমায় তোমার পড়বে মনে,
তোমার শোনানো গল্প শুনে
ঘুমিয়ে রবে রাত্রে দিনে।

গণিত ভুগোল পড়তে হবে
আরও একটু বড় হলে,
কানটি মলে বকব তখন
অঙ্ক কষতে বিষম খেলে।

মুশকিল নয় আসান সবই
ভয় পেও না কোনোটারে,
দেখবে সহজ সরল কত
নতুন যুগের কম্প্যুটারে।

তুমি অনেক বড় হবে
আমার আশায় আলো ফোটাবে,
জয়ের মালা গলায় দিয়ে
বিশ্বে প্রথম স্থানটি লবে।

তাই’ত ভাবি কোণায় বসে
স্বপ্ন সকল করতে সাকার,
নূতন যুগে নবীন রূপে
আম্মা আমার আসবে আবার।

বৃহস্পতিবার, ৭ মে, ২০০৯

কিছু রচনা ২

আজকের রচনাঃ-
কেন এমন?

দিল্লীর, তিলক নগর মার্কেটে শপিং করতে গিয়ে দেখি, খুব ফর্সা, সুন্দরী একটি মেয়ে, বার-বার আমার দিকে ফিরে তাকাচ্ছে। কিছুতেই মনে করতে পারলাম না যে মেয়েটি কে? সে এগিয়ে এসে আমায় ‘নমস্তে’ করল। আমি না চিনলেও ও আমাকে চিনেছে। নাম বলল নেহা। মেয়েটিকে দেখে পাঞ্জাবী মনে হলেও কথাবার্তা হিন্দীতেই হচ্ছিল। কোনো একসময় সে নাকি আমার ছাত্রী ছিল। বছর দুই হল বিয়ে হয়েছে। শ্বশুরবাড়ী বম্বেতে। ইদানীং স্বামীর দিল্লীতে বদলী হওয়ায় বিকাশপুরীতে বাড়ী ভাড়া করে রয়েছে। আমিও বিকাশপুরীতেই থাকি তাই কৌতুহলবশতঃ বাড়ীর নম্বরটা জিগেস করতে জানতে পারলাম যে আমার বাড়ীর কয়েকটা বাড়ী ছেড়েই ওর বাড়ী। তারপর মাঝে-মধ্যে ওর সাথে পাড়াতেই দেখা হয়ে যেত। এক-আধবার ও স্বামী মহেশ কে নিয়ে আমাদের বাড়ীও এসেছে। মেয়েটি খুব হাসিখুশী। গল্পচ্ছলে প্রায়ই একমাত্র ভাইয়ের কথা তোলে। ইজ্ঞিনিয়ারিং পাশ করে সে আমেরিকায় মস্ত বড় চাকরী করছে।

হঠাৎ একদিন ফোন বাজতে দেখি- সেই পাঞ্জাবী মেয়েটির ফোন। বিশেষ ভাবে আমাকে অনুরোধ করছে রাত্রীবেলায় ওর বাড়ী ডিনার করতে। ওর ভাই এই প্রথম আমেরিকা থেকে আসছে। দিদির বাড়ী রাত নটা নাগাদ পৌঁছবে। আমি গেলে ওর ভাইও খুব খুশী হবে। কারণ ওর ভাইও নাকি আমার ছাত্র ছিল। কি আর করি! রাত আটটা নাগাদ ওর বাড়ী গেলাম। খুবই সুন্দর ভাবে সাজানো ছিমছাম বাড়ী। ওরা স্বামী-স্ত্রী আমাকে আপ্যায়ন করে বসাল। এটা-সেটা গল্প হতে লাগল। মেয়েটির নজর অবশ্য বারে-বারেই ঘড়ির দিকে যাচ্ছিল। দেখতে-দেখতে নটা বেজে গেল। সাড়ে নটা বাজল। মেয়েটি অধীর ভাবে অপেক্ষা করছিল ভাইয়ের আসার। আমরা ওকে বোঝাচ্ছিলাম যে অনেক সময়ই ফ্লাইট লেট হয় বা রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম থাকে। মেয়েটির মন হাল্কা করতে আমি ওর সাথে রান্নাঘরে গেলাম খাবার আয়োজন দেখতে। ভাইয়ের জন্য মেয়েটি নানাবিধ রান্না করেছিল। নতুন ক্রকারি সেটে সব সাজানো রাখাছিল। হঠাৎ ফোনটা বাজতে মেয়েটি ছুটে গিয়ে ফোন ধরল। খানিকক্ষণ ফোনে কথা বলে ধীর পদক্ষেপে, কাছে এসে, কান্নাবোজা গলায় বলল যে ওর ভাই এক বন্ধুর বাড়ী উঠেছে। পরে কোনোদিন বোনের সাথে দেখা করতে আসবে। মেয়েটির দুই চোখ জলে ভরে গিয়েছিল।

ওর বেদনাময় সুন্দর মুখের দিকে তাকাতেই হঠাৎ বিদ্যুতের মতই স্মৃতিপটে নামটি ভেসে উঠল----নেহা! বহু বছর আগে, ক্লাস থার্ডে আমি অঙ্কের ক্লাস নিচ্ছি। ক্লাস টু-এর দুটো বাচ্চা ক্রন্দনরত তাদের সাথীকে আমার কাছে নিয়ে এল। তার ঠোঁটের কাছে একটু রক্ত লেগেছিল। সে নাকি নেহার ভাই। এই বয়সের বাচ্চাদের প্রায়ই দুধের দাঁত পড়ে। তাই আমি ওদের বললাম- ‘যাও, এর মুখ ধুইয়ে দিয়ে ওকে নিজেদের ক্লাসে নিয়ে যাও।‘ বাচ্চাদুটি নেহার ভাইকে নিয়ে চলে গেল। আবার ব্ল্যাক বোর্ডের দিকে যেই মুখ ঘুরিয়েছি, কানে এল ফুঁপিয়ে-ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ। দেখি- নেহা কাঁদছে ও তার ফর্সা সুন্দর মুখটা লাল হয়ে গেছে। ‘যাও, ভাইকে দেখে এস।' বলতেই এক ছুটে সে চলে গেল এবং কিছুক্ষণ পরেই হাসিমুখে ক্লাসে ফিরে এল। আজ কে ফিরিয়ে দেবে তার মুখে হাসি!

বুধবার, ৬ মে, ২০০৯

কিছু রচনা

বন্ধুগণ সকলকে জানাই নববর্ষের শুভেচ্ছা ও ভালবাসা। বহুদিন পরে ব্লগে বসলাম, কেননা গরমের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে –ফাঁকে কিছু গল্প ও কবিতা লেখার চেষ্টা করেছি। সেই সংকলনের থেকে একটা গল্প নিলাম। গল্পের নাম-
এক অবিস্মরণীয় রাত

জুন মাসের এক সামার ক্যাম্পে, কুড়িজন স্কুলের ছাত্রীকে নিয়ে আমরা দুজন শিক্ষিকা মধ্যপ্রদেশের 'পঞ্চমড়ী' নামে এক হিল স্টেশনে গিয়েছিলাম। ক্যাম্পে তিনশজন সদস্যদের মধ্যে সবার ছোট দশ বছরের পারুল। প্রতিদিন প্রায় বারো কিলমিটার করে হেঁটে দুদিনেই সকলের পা লোহার মত ভারী হয়ে দাঁড়াল। কেবল মনে হত কতক্ষণে সন্ধ্যে হবে আর ক্যাম্প-ফায়ার এ্যাটেন্ড করে বিছানায় গা এলিয়ে দেব

ট্রেকিং এর সময় একদিন ক্যাম্পে ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। এরপর ক্যাম্প-ফায়ার – মানে নাচ-গানের পালা। তারপর শয্যাগ্রহণ। হঠাৎ শুনলাম সকলকে তৈরী হয়ে নিতে হবে নাইট ট্রেকিং এর জন্য। ক্যাম্পের পরিচালক জানিয়ে দিল যে পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচতে যতটা সম্ভব শরীর ঢেকে রাখতে হবে, কেবল মুখের কিছুটা অংশ খোলা থাকবে।

আমাদের তিনশ জনকে একটা লম্বা লাইনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল। ছোট বাচ্চাদের মত হাতদুটো আগের জনের কাধেঁ রেখে চলতে হবে। একটাও কথা বলা চলবে না। নিজের সাথে টর্চ রাখা চলবে না। আমরা এখন পশু-পাখীর রাজত্বে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। আমাদের কোনো অধিকার নেই ওদের জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটাবার। যদি একান্তই প্রয়োজন হয় তাহলে আস্তে করে বলতে হবে ‘হল্ট’। দলের আগে দুজন পরিচালক রইল এবং সবশেষে দুজন। চারজনের কাছেই প্রয়োজন মত অস্ত্র-শস্ত্র ছিল।

এবার শুরু হল আমাদের ‘নাইট ট্রেকিং’। আমরা ছোট বড় তিনশ জন, অন্ধকার রাতে, রীতিমত অন্ধের মত পা টিপে-টিপে নিঃশব্দে এগোতে লাগলাম। এবড়ো খাবড়ো রাস্তায় হাঁটতে খুবই অসুবিধা হচ্ছিল। পা ফেলে-ফেলে বুঝে নিতে হচ্ছিল আগে কোনো খানা-খন্দ আছে কি না। মাঝে মধ্যেই জন্তু জানোয়ারের নানা রকম আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। সত্যি বলতে গেলে কি একটু-একটু ভয়ও করছিল। বেশ কিছুটা এগিয়েছি, হঠাৎ দেখলাম এদিক-ওদিক আলোর ঝিলিক। আলোগুলো একবার করে জ্বলছে আর নিভছে। চারিদিক ঘন অন্ধকারের মাঝে-মাঝে আলোর জ্যোৎস্না যে কি রকম সুন্দর লাগছিল তা বলে বোঝানো যায় না। একটু খেয়াল করতেই বুঝতে পারলাম আসলে ওগুলো জোনাকী পোকা। এক একটা গাছে পুরোপুরি ছেয়ে রয়েছে। গাছগুলোর যে রকম আকার, আলোর ঝিলিকও সেইভাবেই দেখা দিচ্ছে। এইরকম মায়াবী আলো আধাঁরের মাঝখান দিয়ে আমাদের দল মন্থর গতিতে এগোতে লাগল। কোথায় যাচ্ছি, কতদূর আর যেতে হবে, কিছুই জানা নেই। কিছু জিজ্ঞেস করারও উপায় নেই। ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত, রোমাঞ্চিত আমরা যেন এক অদ্ভুত মোহমায়ার টানে এগিয়ে চলেছি। হঠাৎ অনুভব করলাম – কই, জন্তু-জানোয়ারের ডাক ত আর শুনতে পাচ্ছি না। চারি দিকে নিশ্ছিদ্র অন্ধকার অথচ পা ফেলতে আর একটুও অসুবিধা হচ্ছে না! যেন শ্বেত পাথর দিয়ে বাঁধানো মসৃণ জমি। এ কোন জগতে প্রবেশ করলাম? এ কি কোনো মায়াপুরী না এলিয়ন জগত? এক অদৃশ্য টানে পা নিজে থেকেই এগিয়ে চলেছে। এই রোমাঞ্চকর শিহরণের মাঝেই লম্বা লাইনটা হঠাৎ গোল হতে শুরু করল। এখন আর আমাদের হাত দুটো অন্যজনের কাঁধে নেই বরঞ্চ একে অপরের হাত ধরে রয়েছি এবং গোলাকার এক বৃত্ত রচনা করে সকলেই বসে পড়েছি। কিন্তু এই অদৃশ্য সঞ্চালন কোথা থেকে হচ্ছে? কাউকেই ত দেখতে পাচ্ছি না। সেই চারজন অস্ত্রধারীই বা গেল কোথায়? আমরা নির্বাক হয়ে তিনশ জন বসে রইলাম। আকাশে চাঁদ তারা কিছুই দেখা যাচ্ছে না। নাকি ওটা আকাশই নয়! এলিয়ন জগতে কি চাঁদ তারা বলে কিছু নেই?

এইসব আকাশ পাতাল ভাবতে-ভাবতে হঠাৎ এ কি দেখলাম? আমাদের গোলাকার দলে, সকলে ত বেশ স্থির হয়েই বসেছিল। যদিও কায়ার চেয়ে তাদের ছায়া রূপটাই বেশি দেখতে পাচ্ছিলাম। কিন্তু আমার ঠিক সামনের জন কোথায় চলে গেল? দুজনের মাঝে একটা গ্যাপ কি ভাবে সৃষ্টি হয়ে গেল? কাউকেই ত উঠে যেতে দেখলাম না। তাহলে কি আমার সংশয়টা নিশ্চিতে পরিণত হতে চলেছে? মাথাটা কিরকম ঝিম-ঝিম করতে শুরু করেছে। এ কি! চারটে মাথা বাদ দিয়ে আবার একটা মাথা নেই দেখছি। তাহলে কি প্রতি পঞ্চমজন কে ওরা অদৃশ্য শক্তিতে নিজেদের কাছে টেনে নিচ্ছে? দেখতে-দেখতে আবার পঞ্ছমজনের জায়গা শুন্য মনে হল। আচ্ছা! এক-এক করে কি ভাবে ওরা বিলীন হয়ে যাচ্ছে? প্রফেসর শঙ্কুর ‘এ্যানাইহিলিন’ গান ত শুনেছি। (যা দিয়ে যে কাউকে নিশ্চিহ্ন করা যায়) কিন্তু কাউকে ত সেরকম কিছু চালাতে দেখলাম না! ততক্ষণে আমি রীতিমত ঘামতে শুরু করেছি। তাড়াতাড়ি গুণে দেখবার চেষ্টা করলাম যে আমি হতভাগ্য পঞ্ছমের মধ্যে পড়ছি কি না। উন্মাদের মত যখন গুনছি তখন দেখলাম, না – আর কোনো নিয়ম মেনে নয়, মাঝে মধ্যেই এক-একটা স্থান শুন্য হয়ে যাচ্ছে। সারাদিনের ক্লান্ত শরীরে আর কিছুই ভাবতে পারলাম না। যাদের হাতে আমরা পড়েছি তাদের কি উদ্দেশ্য? এই পার্থিব শরীরগুলো নিয়ে ওরা কি কিছু টেস্ট করতে চায়? হঠাৎ মনে হল বহুদূরে এক আলোক বিন্দু দেখতে পেলাম। এবার তাহলে ওদের স্পেসশিপ টা এসেছে আমাদের সুদূরপারে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ভাগ্যের হাতে নিজেদের ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার নেই। নীরবতা ভঙ্গ করা চলবে না তাতে প্রাণ যায় যাক। আলোক বিন্দুটা যত এগিয়ে আসতে লাগল, দেখলাম, স্পেসশিপ যেমন গোল হয় শুনেছিলাম তেমন ত নয়, বরঞ্চ কিরকম জীপের আকারের। একেবারে কাছে এলে পর দেখলাম – না, কোনো স্পেসশিপ নয়, জীপ ই। হঠাৎ কোথা থেকে সেই চারজন পরিচালকও চলে এল। ডান দিকে ফিরতেই দেখি, পাশের জনের মাথাটিও উধাও। কখন যে পারুল আমার কোলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, বুঝতেও পারিনি। পরিচালকগণ সব ঘুমন্ত (উধাও) বাচ্চাদের তুলে গরম বোর্নভিটা খেতে দিল। আমরা সকলে বোর্নভিটা খেয়ে চাঙ্গা হয়ে নিলাম। আবার সেই রকমই কাঁধে হাত রেখে, নীরবে, লাইন করে ক্যাম্পে ফেরা হল

পরে জেনেছিলাম মসৃণ জায়গাটা ছিল একটা হেলিপ্যাড। ‘নাইট-ট্রেকিং’ এর জন্য সব আলোগুলো বন্ধ রাখা হয়েছিল।

রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০০৮

বিজয়ার নেমন্তন্ন (ক্রমশঃ)

কালকের বিজয়ার নেমন্তন্নটাই এবার শেষ করা যাক। পরস্পর শুভ সম্ভাষ্ণণের পর জল্পানের ব্যবস্থা ভালই ছিল।বড়-বড় রাজভোগ, কালো জামুন, গরম কচুরী, মাংসের ঘুগনি ও ঢোকলা (গুজরাটী খাবার)।নৈশ ভোজনে ছিল- রুই মাছের পাতুরি,সরু চালের ভাত,সোনা মুগের ডাল,বেগুনি,ধোকার ডালণা,পোলাও, খাসির মাংস, মাছের কালিয়া,আমষত্ত ও খেজ়ূড় দিয়ে টোমেটোর চাটণি ও মিষ্টি দই। তারপর চলল অণেক রাত পর্যন্ত গল্প গুজব।বাড়ী ফিরতে- ফিরতে কেবল ই মনে হচ্ছিল ,মা দুর্গার পুত্র কন্যা সহ স্বামী গৃহে ফিরে যাওয়ার সৌজন্নেই কি এই প্রীতি ভোজের আয়োজন? এই ভয়, এই আশঙ্কার অবসান কবে হবে?

শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০০৮

বিজয়ার নেমন্তন্ন

সবারে জানাই শুভ বিজয়ার শুভেছা ও ভালবাসা। আজকে আমরা যাছি প্রতিবেশীর বাড়ী বিজয়ার নেমন্তন্নে। আমরা বেরব ৮টার সময়। এখন বাজে ৭টা। বিজয়ার নেমন্তন্ন টা কেমন হল, এসে জানাব। এই এক ঘন্টার মধ্যে তৈরী হয়ে বেরতে হবে। এদিকে আবার ছেলের জ়্বর। ওর জন্য আবার হাল্কা কিছু রান্না করে যেতে হবে। তাই আজকের মত এখানেই শেষ করছি।